বলিউডের পর্দার আড়ালের গল্পে আবারও সরব হয়েছেন জনপ্রিয় চলচ্চিত্র ‘দাবাং’-এর পরিচালক অভিনব কাশ্যপ। সাম্প্রতিক সময়ে ‘বলিউড থিকানা’-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি আমির খানের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে বেশ কিছু বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন।
অভিনবের দাবি—
আমির খান অভিনয়ে নিখুঁত হলেও, শুটিংয়ের সেটে তাঁর অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণমূলক আচরণ সহকর্মীদের জন্য ক্লান্তিকর হয়ে ওঠে।
🎬 “আমিরের সঙ্গে কাজ মানেই মানসিক ক্লান্তি”
অভিনব কাশ্যপ বলেন,
“আমির খান নিখুঁত অভিনয়ের জন্য পরিচিত, কিন্তু তিনি শুধু অভিনয়েই সীমাবদ্ধ থাকেন না। এডিটিং, পরিচালনা, এমনকি প্রযোজনার ক্ষেত্রেও তিনি হস্তক্ষেপ করেন। সব কিছুই তাঁর নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাঁর সঙ্গে কাজ করলে মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়তে হয়।”
পরিচালকের ভাষায়, আমির এতটাই পারফেকশনিস্ট যে অন্য শিল্পীরা নিজেদের মতো সৃজনশীলতা প্রকাশের সুযোগ পান না। এই ‘অতিরিক্ত পারফেকশনিজম’ শেষ পর্যন্ত কাজের আনন্দ নষ্ট করে দেয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
🎭 “পারফেকশনিজম আসলে এক ভ্রান্ত ধারণা”
আমির খানের “পারফেকশনিস্ট” পরিচয়ের সমালোচনা করে অভিনব বলেন,
“তিনি একেকটা শটের ২৫টা টেক দেন, কিন্তু প্রথম আর শেষ টেক প্রায় একই রকম থাকে। এতবার টেক নেওয়ার পরও কোনো নতুনত্ব আসে না। এটা নিখুঁত হওয়ার চেষ্টা নয়—বরং ফাঁপা গভীরতা দেখানোর চেষ্টা।”
অভিনবের মতে, অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ ও অযথা পুনরাবৃত্তি অনেক সময় সৃজনশীলতার জায়গায় শূন্যতা তৈরি করে।
🎥 “বড় নির্মাতারা কেন বারবার আমিরের কাছে?”
অভিনব কাশ্যপের বিস্ময়—রাজকুমার হিরানি ও রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহরার মতো বড় নির্মাতারা কেন নিয়মিত আমির খানের সঙ্গে কাজ করেন।
তিনি বলেন,
“তাঁরা এত বড় পরিচালক, অথচ এখনো আমির খানের বাড়িতেই বৈঠক হয়! আমি ভাবি, আমিরের মধ্যে এমন কী আছে যে সবাই তাঁকেই বেছে নেন?”
এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি বলিউডের তথাকথিত ‘ক্ষমতার কাঠামো’ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন, যেখানে কিছু নির্দিষ্ট তারকা ও প্রযোজকই সব সিদ্ধান্তে আধিপত্য দেখান।
🌍 সমাজে আমিরের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন
সাক্ষাৎকারে অভিনব শুধু সিনেমা নয়, আমির খানের সামাজিক দায়িত্ববোধ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন,
“বড় তারকারা সাধারণত সমাজের জন্য কিছু করেন। কিন্তু বিপর্যয়ের সময় আমরা কি কখনো দেখেছি আমির খানকে এগিয়ে আসতে?”
তিনি উদাহরণ হিসেবে ‘দঙ্গল’ ছবির বাস্তব চরিত্র মহাবীর ফোগাট-এর কথা উল্লেখ করেন। তাঁর দাবি, স্থানীয় কুস্তি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোর উন্নয়নে আমির কোনো সহায়তা দেননি। যদিও তিনি স্বীকার করেন,
“হয়তো গল্পের কপিরাইটের টাকা তিনি দিয়েছেন, তাই হয়তো তাঁকে বাধ্য করা যায় না।”
🗣️ “অভিনেতার সীমা ছাড়িয়ে যান আমির”
অভিনব কাশ্যপের মতে, আমির খান অনেক সময় অভিনেতার ভূমিকা পেরিয়ে গিয়ে সৃজনশীল সিদ্ধান্তেও আধিপত্য দেখান, যা পুরো টিমের জন্য অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি করে। তাঁর দাবি, আমিরের সঙ্গে কাজ করা মানে পুরো সেটকে তাঁর ইচ্ছার ওপর নির্ভর করতে হয়।
অভিনব কাশ্যপের অভিযোগ: আমির খানের নিয়ন্ত্রণে বলিউডের সৃজনশীলতা?
তবে এখন পর্যন্ত আমির খানের পক্ষ থেকে অভিনব কাশ্যপের এসব অভিযোগের কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
বলিউডে ক্ষমতার ভারসাম্য, পারফেকশনিজম ও সৃজনশীল স্বাধীনতা নিয়ে এই বিতর্ক নতুন নয়। তবে অভিনব কাশ্যপের এই সরাসরি মন্তব্য আবারও সামনে নিয়ে এল সেই পুরনো প্রশ্ন—
নিখুঁততার খোঁজে কি আমির খান আসলে সৃজনশীল স্বাধীনতাকেই দমিয়ে রাখছেন?